মো. নেয়ামত উল্লাহ | শনিবার, ২৮ মার্চ ২০২০ | পড়া হয়েছে 560 বার
বাসায় থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো, এই পৃথিবী থেকে আমি বিচ্ছিন্ন। আমার নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নারীদের কীভাবে দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, দশকের পর দশক, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী গৃহবন্ধি করে রাখা হয় এটা ভেবে আমার আরও বেশি দম বন্ধ হতে থাকে।
মনে হয়, আমি জরুরী বিভাগের কোনো মুমূর্ষু রোগী। আমার ঘুম ভেঙে যায় এটা ভেবে যে, মাত্র পাঁচ দিনে আমি কীভাবে অতিষ্ঠ হয়ে যেতে পারি! অথচ এই একুশ শতাব্দীতেও যে সকল নারীদের ঘরে-কাপড়ে-চিন্তায়-অর্থে বন্দি করে রাখা হয় তাদের জীবন কেমন হতে পারে? তারা সকলেই তো জন্মগতভাবেই মুমূর্ষু- ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত, জর্জরিত, ও ব্যথিত। তাদের তো কোনো জীবনই নেই; জীবন বলে তারা যা যাপন করে- তা চিড়িয়াখানার থেকেও নিকৃষ্ট ও পীড়নদায়ক এবং শোকসভাময় আঘাতপ্রাপ্ত স্তব্ধতা।
বহুদিন পর অর্থাৎ দীর্ঘ পাঁচদিন পর সাহস সঞ্চয় করে যখন বিল্ডিং-এর নিচে গিয়ে দাড়াই; বোধ করি, আমার ধৈর্য্যের সীমানাকে সাময়িক বিরতি জানিয়ে প্রাণভরে মুক্ত আলো বাতাস গ্রহণ করাবো। অথচ, আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেও শান্তিমত নিঃশ্বাস নিতে ব্যর্থ।
আমার মস্তিষ্কে এক ভীতি কাজ করছে। আমার মনে হচ্ছিলো, এই প্রাণভরে নিঃশ্বাস হতে পারে আমার চিরস্থায়ী বিদায়। কারণ- পরিস্থিতি, ভীতি, নিয়ম ও অভ্যাস। এবং এই নিয়ম ও অভ্যাস, ভীতি ও পরিস্থিতি থেকে আমি বুঝতে পারি যে- একবার নারীদের বন্দি করে ফেললে সেই গুহা থেকে মুক্ত হওয়া কতোটা কঠিন ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতে পারে। এবং এক্ষেত্রে পুরুষেরা খুব সুকৌশলে নারীদের খাঁচায় বন্দি করতে সক্ষম।
নারীরা আবেগপ্রবণ বলেই যে পুরুষেরা এই সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে তা নয় বরং ছোটকাল থেকে নারীদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে পুরুষ ও পুরুষতন্ত্র। যার ফলে নারীদের আত্মবিশ্বাস কখনো শক্ত হতে পারেনি।
ফেসবুকে কয়েকজন সুপুরুষের সুমহান স্ট্যাটাস এমন ছিলো যে ‘আমরা কি মাইয়া নাকি যে বাড়িতে বসে থাকুম’। এমন চিন্তাধারা করোনাভাইরাসের থেকেও কম ভয়ংকর নয়। এই পুরুষতান্ত্রিক ভাইরাসের কারণে এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে নারী পুরুষের সমতা সম্ভব হয় না। এই ভাইরাস ছোটো বড়ো, উঁচু নিচু, সাদা কালো, মোটা চিকন, ভদ্রতা অভদ্রতা, ভুল ঠিক, নারী পুরুষ, ধনী গরীব, বিশ্বাস অবিশ্বাস, ধর্ম অধর্ম ইত্যাদি গোঁজামিলের মাধ্যমে মানুষের সাথে মানুষের পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছে। বলা যেতে পারে- যেই মাইয়া মানুষের পেট থেকে পুরুষেরা বের হয়ে মুক্তভাবে নিঃশ্বাস ফেলতে পারে, সেই মাইয়া মানুষের গলা নিজ হাতে টিপে স্বাধীনতাকে হত্যা করার নামই পুরুষতন্ত্র। এই পুরুষতন্ত্র নারীকে রেখেছে আজন্ম কোয়ারেন্টাইনে।
Visits since 2018
Your IP: 44.192.94.86
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |